নিরীক্ষার মূল উপাদান আলোচনা কর। Discuss the basic elements of auditing.
সূচনা: কোনো ব্যবসায়ের বা অন্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যকলাপ এবং এর ফলাফল নির্ধারণ করা বা এদের সততা নিরূপণ করা ও সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য এর বইগুলো ও অন্য দলিলপত্রাদির নিয়মানুগ বা সংঘবদ্ধ পরীক্ষাকে নিরীক্ষা বলে। নিরীক্ষার সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর কতগুলো উপাদান পাওয়া যায়। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো-
১। মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের কাছে গুরুত্বঃ যেসব প্রতিষ্ঠানে মালিকের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকে না সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের ব্যবসায়ের সার্বিক কার্যকলাপের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান। তারা তাদের মূলধনের লাভজনক ব্যবহারও নিশ্চিত করতে চান। মালিকের এ চাওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বছরের শেষে প্রতিষ্ঠানে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে পুরো বছরের প্রণীত হিসাবের যথার্থতা ও উপযুক্ততা যাচাই করা যায়।
এছাড়া কোম্পানি পরিচালনা করে পরিচালনা পর্ষদ। পরিচালনা পর্ষদ যেন শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা বণ্টনের বেলায় অন্যায় করতে না পারে সেজন্য কোম্পানি নিরীক্ষার প্রয়োজন বোধ করে। সুতরাং মালিক/ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে নিরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
২। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্বঃ আধুনিককালে নিরীক্ষা ব্যবস্থাপনার কাছে একটি হাতিয়ারস্বরূপ। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে জানতে পারে তাদের গৃহীত পরিকল্পনা কতখানি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর মালিক বা শেয়ারহোল্ডাররা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা, দক্ষতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারে।
৩। পাওনাদারের কাছে গুরুত্বঃ প্রত্যেক পাওনাদারই তাদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে চায়। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আরেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাকি সংক্রান্ত কোনো লেনদেন করবে কিনা তা নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সচ্ছলতার ওপর। আর সঠিক আর্থিক সচ্ছলতা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে অডিট রিপোর্ট। সুতরাং এক্ষেত্রেও নিরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
৪। অর্থসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে গুরুত্ব: প্রত্যেক অর্থসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠান যেমন- ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি। কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেবে কিনা বা প্রদান করলে প্রতিষ্ঠানের তা পরিশোধের ক্ষমতা আছে কিনা বা সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ কী ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিবেচনা করে ঋণ প্রদান করে থাকে। উপরোক্ত বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অডিট রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫। শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে গুরুত্ব: শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি, উন্নতি অনেকটা নির্ভর করে শ্রমিক-কর্মচারীর ওপর। শ্রমিকের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান ন্যায়সঙ্গত কিনা বা শ্রমিক- কর্মচারীদের অধিকার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে।
৬। আয়কর কর্তৃপক্ষ ও তৃতীয় পক্ষের কাছে গুরুত্ব: আয়কর কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আয়কর সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেন। আবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবে আবার হিসাব গবেষকের গবেষণা তথ্যের জন্য অডিট রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
উপরের আলোচনার আলোকে দেখা যায়, নিরীক্ষা শুধু প্রতিষ্ঠানের জন্য নয় এবং তা প্রতিষ্ঠানের সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে সমভাবে গুরুত্ব বহন করে। তাই তো উত্তরোত্তর এর কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
Disclaimer: We do not guarantee that the information of this page is 100% accurate and up to date.